কুম্ভীলক।

  অনিরুদ্ধ আর বিয়েই করল না। লেখক অনিরুদ্ধ শেষপর্যন্ত হয়ত বিয়েই করবে না। তার এখন যা বয়স তা থেকে এমনটা মনে হওয়া অন্তত অসম্ভব কিছু না।

  এমন ক্ষেত্রে যা হয় তারও একটা ইতিহাস ছিল। একটি অপরিণত বয়সের প্রেমিকা ছিল। এমন একটা বয়স যখন প্রেমের আবেগটা সর্বাধিক থাকে অথচ প্রেমের সার্থকতার নিয়মগুলো অজানা থেকে যায়। তার প্রেমিকা ডাকসাইটে ছিল। একদিন নিশ্চিত পথে হেঁটে গেছে। যেমনটা হয় আর কি।

  এরপর সরকারি চাকুরে অনিরুদ্ধ যে কেন বিয়ে করে নি অন্যের কাছে তার একটা সঙ্গত ব্যাখ্যা থাকলেও তার নিজের কাছে এর কোনো বিশ্বাসযোগ্য কারণ ছিল না। এমন নয় যে ব্যর্থ প্রেম তাকে এতটাই বিষণ্ণ করে দিয়েছিল বা প্রাক্তনীতে সে এমনই বিভোর হয়ে ছিল যে অন্য কারো সাথে শুরু করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সম্ভবত সে ভেতরে ভেতরে বিয়ে করার তাগিদটাই আর বোধ করল না অথবা তার নিজেরই হয়ত বিয়ে করার ইচ্ছে কোনোদিনই ছিল না। আমাদের পক্ষে সঠিক কারণ জানা অসম্ভব। কারণ সে একজন লেখক এবং লেখকদের মনের জগত তাদের লেখালেখির মধ্যে স্বপ্নের মতই বিকৃতভাবে প্রকাশিত হয়।

  লেখালেখি আর অফিস এই দুই নিয়ে নিজের অন্তর্নিহিত জগতে সে দিব্য ছিল বিভোর হয়ে। সমস্যা শুরু হল নতুন উপন্যাস নিয়ে। সেখানে এক দম্পতির বিছানায় মিলনকালে কিছু সংলাপ জরুরি। সেটা কী হতে পারে তা সে বুঝতে পারছে না। এমন নয় যে কল্পনা করা যায় না। এমন তো কত সিনেমা সে দেখেছে। কত গল্প-উপন্যাস সে পড়েছে। কিন্তু সে একটু খুঁতখুঁতে। বিশেষত সংলাপের ব্যাপারে। তাই এই ব্যাপারটা কিভাবে হতে পারে সেটা নিয়ে ও একটু বিব্রত আছে।

  বিব্রত মানে বেশ বিব্রত। ট্রেনে-বাসে-টয়লেটে ওই একই চিন্তা। এমন সময় তার বন্ধুদের হোয়াগ্রুপে সে একটি দুঃসংবাদ পেল। তার প্রাক্তনী যে কিনা স্বামীর সাথে কানাডায় থাকত রেনাল সেল কার্সিনোমায় সম্প্রতি মারা গেছে। খবরটা তাকে খুব বিব্রত রাখল কিছুদিন। কিন্তু কয়েকদিন পর থেকেই আশ্চর্যভাবে তার মনে হতে লাগল তার প্রাক্তনীর সাথে তার আবার দেখা হবে।

  সে ডিসেম্বরের ঠান্ডায় ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে কালপুরুষ দেখত। সেটি দক্ষিণের আকাশ থেকে যতক্ষণ না তার মাথা ছাড়িয়ে চলে যেত ততক্ষণ সে অপেক্ষা করত। রাতে আলো নিভিয়ে দরজা খুলে শুত। সে জানত ও আসবে। একদিন সত্যি সত্যি এলোও। কথায় কথায় সেই প্রেমিকাপ্রেত তাকে একটি বর দিয়ে গেল। একটি মাত্র রাত অদৃশ্য হয়ে সে কোনো একটি দম্পতির মিলনদৃশ্য দেখতে পারবে।

  পরের দিন রাতেই সে তার পাশের ফ্ল্যাটের মধ্যবয়স্ক এক দম্পতির বেডরুমে ছায়ার মত ঢুকে পড়ল।

  – কি গো হবে?

  – কি আর হবে। তুমি তো পাশবালিশের মত পাশ ফিরে শুয়ে আছো।

  – তোমার কি পি চলছে?

  – চোদ্দ বছর হয়ে গেল এখনো তোমার ডেট মনে থাকে না।

  ভদ্রলোক হাত দিয়ে কিছু একটা ফিল করলেন। অন্ধকারে এর মধ্যে আস্তে আস্তে তার চোখ কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। দুজনেই কাপড়-জামা খুললেন। স্বামীটি ওই অবস্থাতেই মশারি থেকে বেরিয়ে জানালার পর্দাটা টেনে দিলেন।

  – এই কি করছ বল তো? এত লাগছে কেন?

  – তোমার এই বিয়ের পর থেকেই চোদ্দ বছরের মেয়েদের মতো ব্যথা লাগা কবে যে যাবে!

  – তুমি কি এতদিনেও ঠিকঠাক বোঝো না ওটা কোথায়?

  – তোমার এমন ড্রাই থাকে আমার নিজেরও এখন খুব লাগে।

  – সে একই কথা। কত কি তো পাওয়া যায় আনতে পারো না।

  – কলকাতায় এসবের আবার দোকান আছে নাকি?

  – অনলাইন তো আছে।

  – হ্যাঁ। বাড়িতে আসুক। তারপর তুমি আমি কেউ থাকব না। মা ওসব খুলে দেখুক।

  এরপর যা শুরু হল তাকেই সম্ভবত মেন কোর্স বলে। তাড়াহুড়োতে আমাদের লেখকবাবু জাঙ্গিয়া পরে আসতে ভুলে গেছেন। যদিও সে অদৃশ্য তবু তার কেমন লজ্জা হতে থাকল। শত হলেও সে ভার্জিন বলে কথা। এর মধ্যেই প্লেটে মাটন এসেছে। পরিবেশকরা একটু টাইম দিচ্ছে সবাইকে। কবজি ডুবে গেছে।

  – এই কালকে রান্নার দিদি আসবে না। আমাকে সকালে ডেকে দিও।

  – হুম।

  – মেয়ের স্কুলের স্পোর্টসে দুদিন কম্পালসারি অ্যাটেনডেন্স। আমি দুদিন ছুটি নিতে পারব না। তুমি একদিন ম্যানেজ করবে।

  – হুম।

  – মার ডিপ্রেসনটা আবার বেড়ে গেছে কদিন। কথা বলছে না, রুড ব্যবহার…

  – উফফ। তোমার কি হয়েছে বলো তো কেমন জেনো ঠান্ডা মেরে থাকো।

  – এই আমার না ভয় করছে।

  – ভয়?

  – হ্যাঁ গো। তুমি জানালা খুলে শীতকালে এসব করলে আমার সবসময় মনে হয় আলমারির পাশে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *